ইংল্যান্ড দলে কয়জন ডানহাতি? জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, জস বাটলার, লিয়াম লিভিংস্টোন—নামগুলো বলার পর ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর এল, ‘বাটলার ছাড়া এদের কেউই তো আমাদের দেশে আসেনি।’ মুঠোফোনে কথোপকথনটা হচ্ছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে থাকা এক ক্রিকেটারের সঙ্গে। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে বাংলাদেশ সফর করে গেছে ইংলিশরা। বাটলার অধিনায়ক বলেই হয়তো সেই সফরে এসেছেন। এ ছাড়া ইংলিশ টপ অর্ডারের কেউই আসেননি। তবু বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে।
আজ গুয়াহাটিতে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ যে ইংল্যান্ড দলের মুখোমুখি হবে, সেটা নিশ্চিতভাবেই মার্চের সেই ইংল্যান্ড নয়। বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররাই এ ম্যাচে খেলবেন। এই ইংল্যান্ড ওয়ানডে ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও শিরোপাটা তাদের দখলে। সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের এমন চূড়ান্ত আধিপত্যের কারণটা তো সবার জানাই—আক্রমণাত্মক ব্যাটিং।
এই ইংল্যান্ড কতটা আক্রমণাত্মক হতে পারে, সেটা অবশ্য বাংলাদেশ দলের দেখার সুযোগ হয়নি এখনো। এ বছর দুই দলের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি হয়েছে বাংলাদেশের কন্ডিশনে, যেখানে ইংল্যান্ড তাদের সেরা দল খেলায়নি। এর আগে দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছে চার বছর আগে, ২০১৯ বিশ্বকাপে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। দুবারই ইংলিশ ব্যাটিং–দাপটের সামনে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। আজ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলবে দুই দল। তবে এ ম্যাচের ভেন্যু গুয়াহাটি বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামও ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গ।
এ মাঠেই শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি মেচটা বাংলাদেশ জিতেছে বোলিংয়ের সৌজন্যে। তবে ইংল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কা এক নয়। তারকায় ঠাসা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিংকে আজ কঠিন পরীক্ষায়ই পড়তে হতে পারে। ইংল্যান্ডের মতো দলের ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলাররা কেমন করেন, তার একটা ‘লিটমাস টেস্ট’ হয়ে যাবে আজ। ওভারপ্রতি ৬–এর বেশি করে রান তোলায় কোনো জড়তা নেই ইংল্যান্ডের। পরিস্থিতি যেমনই হোক, দ্রুত রান তোলার দক্ষতায় একটা লম্বা সময় ধরে ইংলিশদের চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউই ছিল না।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডই ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসের একমাত্র দল, যারা ধারাবাহিকভাবে প্রতি ওভারে ৬–এর বেশি রান করেছে। গত দুই বছরে দ্রুত রান তোলার প্রতিযোগিতায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সময়ে পিছিয়ে ছিল না ভারত আর অস্ট্রেলিয়াও। বিশ্বকাপের মূল পর্বে এই দলগুলোর বিপক্ষেও খেলতে হবে বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপের স্পোর্টিং উইকেটে তাসকিনদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নেবে এই দলগুলোই।
ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কেমন করবে, সেটা অনেকটাই নির্ভর করবে বোলারদের পারফরম্যান্সের ওপর। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কিছুটা অধারাবাহিক হলেও ইতিবাচক যদি কিছু থেকে থাকে, বোলিং। সাকিব-মিরাজদের নিয়ে সাজানো স্পিন আক্রমণ বরাবরই গোছানো, এবার পেস বোলিংয়ের শক্তিটা যোগ হওয়ায় বোলিং আক্রমণের চেহারাই গেছে পাল্টে। মাঠের পারফরম্যান্সেও সেটি স্পষ্ট। এবার বোলারদেরই সেই পারফরম্যান্সটা বিশ্বমঞ্চে দেখানোর পালা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের আগে কাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাসকিনের একটি পোস্ট অবশ্য বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের আশাবাদী করবে। হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান ও তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘দারুণ কিছুর আশা করছি, ইনশা আল্লাহ।’
আশা তো থাকেই যে সেই দারুণ কিছুর শুরুটা হবে আজ। এই ম্যাচকে সামনে রেখে গুয়াহাটিতে কাল ছিল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। ব্যাটিং অনুশীলন করতে গিয়ে হাতে সামান্য ব্যথা পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, তবে সেটা গুরুতর কিছু নয় বলেই জানা গেছে দল সূত্রে। ওদিকে আজকের প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলবেন না অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আগে থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত, দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই তিনি বিশ্রামে থাকবেন।
গুয়াহাটিতে প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে আগামীকাল বাংলাদেশ দল যাবে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচের ভেন্যু ধর্মশালায়। তবে প্রাক্–বিশ্বকাপ ফটোসেশন ও সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে অধিনায়ক সাকিব ও টিম ম্যানেজার রাবীদ ইমাম যাবেন আহমেদাবাদে।