বেলা ১১টা ১০ মিনিট; রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চালের আড়তে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে তোড়জোড়। মোটা কালির কলম দিয়ে বোর্ডে চালের মূল্যতালিকা লেখা হয়েছে আগেই, সেটা ঠিকঠাকমতো বসানো আছে কি না, কেউ কেউ সেটা আবার দেখে নিচ্ছেন। মুখে মুখে আলোচনা, ‘মোবাইল কোর্ট আসবে’। বেলা ১১টায় এখানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার তদারকি দল যে আসবে, আগে থেকেই জানতেন এখানকার ব্যবসায়ীরা, তাই সবার সতর্ক দৃষ্টি রাস্তার দিকে।
নির্ধারিত সময়ের প্রায় সোয়া ঘণ্টা পর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদারকি দল এসে পৌঁছায় যাত্রাবাড়ী চালের আড়তে। প্রথমে যায় জনপ্রিয় রাইস এজেন্সি নামের আড়তে। সেখানে টাঙানো তালিকার সঙ্গে চালের নমুনার মিল আছে কি না দেখেন। সব নমুনা চালের মধ্যে নাম ও দামসংবলিত কাগজ লাগানোর নির্দেশ দেন।
আমরা দোকানের ব্যবসা সনদ যাচাই করেছি। ক্রয় রসিদ ও দোকানের মূল্যতালিকার মধ্যে দাম নিয়ে বড় কোনো তারতম্য আছে কি না, তা দেখেছি। সব ব্যবসায়ীকে সতর্ক করে যাচ্ছি। চালের বাজারে অস্থিরতা না কমা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
শ্রাবস্তী রায়, উপসচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়
এই আড়তে প্রতি কেজি আটাশ-১ জাতের চাল ৫৪ টাকা এবং আটাশ-২ চাল ৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। তদারকি কর্মকর্তাদের প্রশ্নের জবাবে আড়তের মালিক নুরুল হক জানান, প্রতি কেজি আটাশ-২ জাতের চাল ৪৯ টাকায় কেনা, বিক্রি করছেন ৫১ টাকায়। আর ৫০ টাকায় কেনা আটাশ-১ চাল বিক্রি করছেন ৫৪ টাকায়।
তখন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রশ্ন করেন, পরিবহন ব্যয়, শ্রমিকের মজুরি ও মুনাফা যোগ করার পর আটাশ-২ চাল ক্রয়মূল্যের সঙ্গে আরও ২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করলেও আটাশ-১ চাল কেন কেজিতে ৪ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন? জবাবে আড়তমালিক বলেন, আটাশ-২ জাতের চাল দ্রুত বিক্রি হলেও আটাশ-১ চাল কম বিক্রি হয়। সে জন্য দাম কিছুটা বেশি।
আরও পড়ুন
আমনের উৎপাদন বেশি, তবু চড়া চালের বাজার
কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে আটাশ-১ চালের দাম কেজিতে ১ টাকা কমানোর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে মূল্যতালিকায় ওই চালের দাম ৫৪ টাকার পরিবর্তে ৫৩ টাকা লিখতে বলেন। আড়তটির একজন কর্মচারী সঙ্গে সঙ্গে তালিকাটি সংশোধন করেন।
এরপর তদারকি দল দিদার রাইস এজেন্সির তালিকায় গিয়ে দেখে, এরফান অটো রাইস মিলের মিনিকেট চাল ৬৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। চাল কেনার চালান দেখান আড়তের ম্যানেজার রবিউল হোসেন। তাতে দেখা যায়, ১৫ জানুয়ারি ৬৫ টাকা কেজি দরে চাল কেনা হয়েছে। ম্যানেজার জানান, সেদিন ২৮০ বস্তা চাল কিনতে ২২ হাজার ৫০০ টাকা ট্রাকভাড়া এবং শ্রমিকদের ৩ হাজার ৮০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়েছে। তাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চাল আনতে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় খরচ পড়েছে ৯১ টাকা ৩৫ পয়সা।
তখন তাঁর আগের চালান দেখতে চান কর্মকর্তারা। ম্যানেজার তা দেখাতে গড়িমসি করেন। পরে কর্মকর্তারা বলেন, ১৫ জানুয়ারির আগের চালানের চাল যদি গুদামে পাওয়া যায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর ম্যানেজার ড্রয়ার থেকে চালান বের করেন। তাতে দেখা যায়, চাল কেনা হয়েছে ৬১ টাকা কেজি দরে। তখন কর্মকর্তারা ম্যানেজারকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে মিনিকেট চালের দাম ৬৯ থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা করতে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তালিকাও সংশোধন করান কর্মকর্তারা।