শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন
                                           

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি পিছিয়েছে

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে। বিবাদী তথা রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ (আজ বৃহস্পতিবার হচ্ছে না) বলে সিদ্ধান্ত দেন।

এর আগে ২ নভেম্বর রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকার ৪৩ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টি উপস্থাপন করলে আদালত বলেন, ৯ নভেম্বর কার্যতালিকায় বিষয়টি ওপরের দিকে থাকবে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিষয়টি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৬ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অপর পক্ষে (রিট আবেদনকারী) ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মোহাম্মদ আশরাফ–উজ–জামান খান।

পরে আইনজীবী আশরাফ–উজ–জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিভিউ দ্রুত শুনানির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল গত সপ্তাহে আদালতে উপস্থাপন করেন। সে অনুসারে আজকের কার্যতালিকায় ৬ নম্বর ক্রমিকে বিষয়টি ছিল। তবে বিবাদী তথা হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন না, যে কারণে দুই সপ্তাহ সময়ের আবেদন করা হয়। আদালত নট টুডে অর্থাৎ আজ বৃহস্পতিবার শুনানি হচ্ছে না বলে আদেশ দেন। রিভিউ আবেদন শুনানির দিন অর্থাৎ আগামী বৃহস্পতিবার যথারীতি বিষয়টি কার্যতালিকায় থাকবে।’
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে বর্তমান সরকারের আমলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। এর বৈধতা নিয়ে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। একই বছরের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে আপিল খারিজ করে রায় দেন।
২০১৭ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাঁর লেখা রায়ে গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন। পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। কেউ কেউ প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন। অন্যদিকে এই রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর ছুটি নিয়ে বিদেশে যান তৎকালীন বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে এসে পৌঁছে। পরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন।

আপিল খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ বছরের ২৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করে রাষ্ট্রপক্ষ, যা গত বছরের আগস্টে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।



ফেইসবুক পেইজ