ফেসবুকে সুন্দরভাবে সাজানো খাবারের ছবি দেখে জিবে জল আসে না, এমন মানুষ কমই আছে। দেখলেই মনে হয়, ইশ্ যদি খেতে পারতাম! এমনই এক বিজ্ঞাপনে ছিল পিকিং ডাকের। চীনের জনপ্রিয় এই প্রজাতির হাঁসের মাংসের ডিশ চেখে দেখার সাধ হয়েছিল সিঙ্গাপুরের ৭৪ বছর বয়সী লোহের। আর তা করতে গিয়ে তাঁকে হারাতে হয়েছে জীবনের সব সঞ্চয়।
সিঙ্গাপুরের ট্যাবলয়েড শিন মিন ডেইলি নিউজ–এর খবরে বলা হয়, ফেসবুকে এক বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়, দেড় কেজি হাঁস পাওয়া যাবে মাত্র ১৭ মার্কিন ডলারে। আর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফি দিতে হবে আরও ৩ দশমিক ৬৪ মার্কিন ডলার।
লোহ বলেন, ২৬ আগস্ট তাঁর পরিবারে নৈশভোজের আয়োজন ছিল। তিনি মনে করলেন, নাতি নিশ্চয়ই এই জনপ্রিয় খাবারটি পছন্দ করবে।
ফেসবুকের বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান লোহকে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে কীভাবে অর্ডার করতে হবে, সেই নির্দেশনা দেয়। সেখানে তাঁকে তাঁর ফোনে গ্র্যাবঅ্যান্ডগো অ্যাপটি ডাউনলোড করতে বলা হয়।
অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই অ্যাপ থেকে বলা হয়, তাঁকে প্রথমে পেনাউ–এর মাধ্যমে ৩ দশমিক ৬৪ মার্কিন ডলার জমা দিতে হবে। এতে লোহের সন্দেহ হয়েছিল। এমনকি তিনি জানতে চেয়েছিলেন, এটি কোনো ফাঁদ নয়তো? কিন্তু ওই ব্যক্তি তাঁকে আশ্বস্ত করেন।
এরপর ৩ দশমিক ৬৪ ডলার জমা দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে লোহের মুঠোফোনের স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে যায়। এভাবে ৩০ মিনিট ধরে মুঠোফোন রিবুট (পুনরায় সচল) হতে থাকে।
লোহের স্ত্রী বুঝতে পারেন, এখানে কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি মেয়েকে জানান। এরপর মেয়ে তাঁর ভাইকে দ্রুত ব্যাংকে ফোন করে বাবার ব্যাংক হিসাব বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, সেই প্রতারক লোহের হিসাব থেকে ৪২ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার (৪৫ লাখ ১১ হাজার টাকা প্রায়) তুলে নিয়েছে।
এমনকি লোহের ডিবিএস ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আগাম প্রায় ৮ হাজার মার্কিন ডলার (৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ প্রায়) তুলে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা।
সিঙ্গাপুর পুলিশের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৭৫০ জনের বেশি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারী ম্যালওয়্যার স্ক্যামের শিকার হয়েছে। হারিয়েছেন ৭০ লাখের বেশি মার্কিন ডলার।