গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে বন্যার প্রভাবে নগরীর বাজারগুলোতে বেড়েছে সব ধরণের সবজির দাম। প্রতিটি সবজির কেজি প্রতি দাম এক লাফে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আলু ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ৫০ টাকার ঊর্ধ্বে। টানা বর্ষণের অজুহাতে একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের দামও। পাশাপাশি ডিম, আদা, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেড়েছে। এতে নাভিশ্বাস ওঠেছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের। আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত এ বাড়তি দামে সবজি বিক্রি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, কর্ণফুলী বাজার ও কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল বাজার ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে। অবাক কান্ড বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ২৪০ টাকায়
বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এই মরিচ বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৯০/১০০ টাকায়। গত রমজানেও ছিল সহনশীল।
দাম বাড়ার পেছনে যদিও ব্যবসায়ীরা কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর বন্যাকে দায়ী করছেন । তবে উপজেলায় বসবাসরত হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক ও চরপাথরঘাটা এলাকার একাধিক সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বন্যার অজুহাতে একটি চক্র কাঁচা ফলমুল ও সবজির দাম
বাড়িয়ে দিয়েছে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা না থাকায় তদারকিহীন ব্রীজঘাট কাঁচাবাজারের এই অবস্থা। বাজারগুলোতে দেখা গেছে, প্রতি কেজি সবজির দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ, মুরগি
প্রভৃতি নিত্যপণ্য। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, অন্যদিকে আমদানিকৃত ইন্ডিয়ান পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৭/৩৪ টাকা দরে।
অনেকে বলেন, বন্যার কারণে দেশিয় হাইব্রিড পিঁয়াজের অনেকটা ক্ষতি হয়েছে। এ কারণেই দেশি পিঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি। এদিকে পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের তফাৎ দেখা গেছে
অনেক। একই অবস্থা আদা রসুনসহ অন্য সব ধরনের নিত্যপণ্যে। এমনকি কাঁচা সবজির মধ্যে টমেটোর দাম পাইকারিতে ৮০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে। ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, পটলের দাম পাইকারিতে ৪০-৫০ টাকা হলেও খুচরায় তা ৮০-১০০
টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল পাইকারি বাজারে ৪৬ টাকা, আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, মোটা স্বর্ণা চাল পাইকারি ম‚ল্য ৩০ টাকা হলেও খুচরায় তা ৪৮টাকার উপরে।
উপজেলার কলেজবাজার, ফকিরন্নিহাট বাজার, শিকলবাহা মাস্টারহাট বাজার, বোর্ডবাজার, চরলক্ষ্যা কাঁচা বাজার, মইজ্জ্যারটেক খোলা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৩০ টাকা, ঝিঙে ৪৫টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পটল ৫৫টাকা, ঢেঁড়শ৫০ টাকা, কাকরল ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ সপ্তাহখানেক আগে মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ঝিঙে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৩৫ টাকা, কাকরল ৪৫ টাকা, বরবটি ৫০
টাকা দরে বিক্রি হয়।
কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সালাম জানান, বন্যার অবস্থা খারাপ। অনেক সবজি পঁচে গেছে। ফলে মাল কম আসে, তাই দাম বেশি। এক সপ্তাহে দামে এত পার্থক্য কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবহন খরচ বেশি এ ছাড়া পাইকারি বিক্রেতারা মিথ্যা কথা বলে বেশি টাকা
নিচ্ছে বলেও তার অভিযোগ রয়েছে।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী রহিম বলেন, সরবরাহ কিছুটা কম। যে কারণে দাম কিছুটা বেশি। বন্যার কারণে বেশ কিছু ক্ষেতে নষ্ট হয়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে সবজির দাম বেড়ে গেছে।
এত বৃদ্ধির কারণ জিজ্ঞাসা করলে একাধিক খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তেই সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তারা আড়ত থেকে বাড়তি দরে কিনে এনে স্বল্প লাভে বিক্রি করছেন।
একইভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র। দামের তারতম্যে মানুষ বিশেষ করে চাকরিজীবী আর খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
চাকরিজীবী মাহফুজ, জনপ্রতিনিধি ফরিদ ও ঠিকাদার কামাল বলেন, আমাদের মতো মানুষের জন্য স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই নিত্যপণ্যের দাম যাতে সহনীয় থাকে এ জন্য ব্রীজঘাট কাঁচাবাজারটির নজরদারি বাড়ানো ও নিয়মিত প্রশাসনের বাজার
মনিটরিং করার কথা বলেন তাঁরা।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছুদিন পর পর বাজার মনিটরিং করা হয়। এছাড়াও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে উপজেলার সকল বাজার সমূহকে একটা নিয়মনীতিতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলমান চলছে
শীঘ্রই যার সুফল পাবে জনগণ।’