ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচার অভিযোগে চলতি মাসের শুরুতে বেসরকারি ১০ ব্যাংকের ১০ জন ট্রেজারিপ্রধানকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই টাকা জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত সোমবার। তবে এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা জরিমানার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আপিল করেছেন। এখন এ আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান গভর্নর নিজেই।
যে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানের জরিমানা করা হয়, সেগুলো হলো মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ট্রেজারি বিভাগ টাকা ও ডলারের চাহিদা-জোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংকে ট্রেজারি বিভাগের প্রধান পদে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ডলার কেনাবেচার দর সাধারণত ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্ধারণ করা হয়। তাঁরা শুধু সেই আদেশ পরিপালন করেন। এর ফলে বেশি দামে ডলার কেনাবেচার দায় তাঁদের হতে পারে না।
জরিমানার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইনে এই জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, এই জরিমানা আরোপ যথাযথ হয়নি। এ জন্য আপিল করা হয়েছে।’
খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকগুলো ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচার পাশাপাশি অন্য ব্যাংক ও অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের কাছেও বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। এই কারণে কোনো ব্যাংক এখন আর বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে না। এর ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা কমে গেছে। আবার কোনো ব্যাংকের হাতে ডলার থাকলেও তা তারা অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে না। কারণ, বেশি দামে অন্য ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করায়ও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে কয়েকটি ব্যাংককে।
ট্রেজারিপ্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলাকে বলেন, মূল সমস্যা ডলারের দাম বাজারভিত্তিক না করা। বড় দুর্নীতি, অর্থ পাচার না ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন কারা বেশি দাম নিল, এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাকে না পেয়ে মেয়েকে শিক্ষা দিতে চাইছে সংস্থাটি। এর ফলে বড় অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হবে।