ওয়াসি সিদ্দিকী, বরেণ্য মোহাম্মদরা ডাগআউটের সামনে লাল-সবুজের বিশাল একটি পতাকা নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। অফস্পিনার পারভেজ রহমানের করা বলটি উড়িয়ে মেরেছিলেন অমিদ রহমান, সেটি লং অন আর লং অফের মাঝামাঝি জায়গায় গেলে অনেকটা ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয় দুই ফিল্ডারের মধ্যে। তবে ক্যাচ ফসকায়নি মোহাম্মদ শিহাবের হাত থেকে। বল তালুবন্দি হতেই ডাগআউটে থাকা ওয়াসি-বরেণ্যরা পতাকা নিয়ে দৌড় দেন মাঠের মধ্যে।
সেই পতাকা ঘিরে উৎসব-উন্মাদনায় মাতলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা।
গতকাল ঐতিহাসিক এক জয়ের সাক্ষী হলো দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয় বাংলাদেশের। সেটিও রেকর্ড গড়ে।
আমিরাতকে ১৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা উৎসব বাংলাদেশের যুবাদের। এশিয়া কাপের আগের ৯ আসরে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল আফগানিস্তানের, ২০১৭ সালে পাকিস্তানকে ১৮৬ রানে হারিয়েছিল তারা।
এমন এক জয়ের পর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি বললেন, ‘আমি আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা খুবই ভালো খেলেছে।
বাংলাদেশ দলীয় প্রচেষ্টার ফল পেয়েছেন। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে প্রায় প্রতি ম্যাচে কেউ না কেউ মনে রাখার মতো পারফরম করেছেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম আশিকুর রহমান শিবলি। টুর্নামেন্টে আগের চার ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটি করা এই ওপেনার গতকাল আরেকটি সেঞ্চুরি করেন। তাঁর ১২৯ রানের অনবদ্য ইনিংসেই মূলত জয়ের ভিত গড়ে ফেলে বাংলাদেশ।
এরপর গোটা টুর্নামেন্টে পেস বোলিংয়ের দক্ষতা দেখানো মারুফ মৃধার নেতৃত্বে বাংলাদেশি পেসাররা বাকি কাজটুকু সারেন।
টস হারা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। এশিয়া কাপ যাত্রার আগে আগে যাঁকে ধরা হচ্ছিল এই দলটির ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ, সেই জিসান আলম ফাইনালেও হতাশ করেন, ফেরেন ৭ রান করে। এরপর রিজওয়ান চৌধুরীকে নিয়ে ১২৫ রানের জুটিতে দলকে বড় সংগ্রহের পথে রাখেন আশিকুর। রিজওয়ান ৬০ করে আউট হলে সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৯৪ করা আরিফুল ইসলামের সঙ্গে ৮৬ রানের জুটিতে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আশিকুর। এই শতকে আশিকুরের চেয়ে আরিফুলকেই বেশি উদযাপন করতে দেখা গেল। দারুণ অর্জনের পাশাপাশি টিমম্যানশিপের এই প্রদর্শনীও নজর কেড়েছে সবার।
আশিকুরের শতকের পর ৬টি চারে ৪০ বলে ৫০ রান করে আউট হন আরিফুল। তবে থামেনি রান তোলার গতি। আশিকুর ব্যাটে চেপে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৮২ করে বাংলাদেশ। ১৪৯ বলে ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১২৯ রান করেন আশিকুর। আয়মান আহমেদ ৫২ রানে ৪ উইকেট নেন।
রান তাড়ায় নামা আমিরাতের ব্যাটারদের কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেননি আগের ম্যাচে ভারতকে হারানোর নায়ক মারুফ। ইনিংসের পঞ্চম ও সপ্তম ওভারে ফেরান প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারকে। পাওয়ার প্লেতে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন রোহানাত দৌলা। এতে ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারায় আমিরাত। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। বাংলাদেশি পেসারদের তোপের মুখে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারায় দলটি। পেসারদের টানা ৭ উইকেটের পর দৃশ্যপটে আসেন অফস্পিনার শেখ পারভেজ। বাকি ৩ উইকেটের ২টি নেন তিনি। তিন পেসার রোহানাত ৩, মারুফ ৩ ও ইকবাল হোসেন ২ উইকেট নেন। এতে মাত্র ৮৭ রানে গুটিয়ে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এই জয়ে চার বছর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৫ রানে হারের ক্ষতে প্রলেপ দিল বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বৈশ্বিক শিরোপা জয় করা দলটির এত দিন যে উপমহাদেশীয় কোনো স্বীকৃতি ছিল না, সে আক্ষেপও ঘুচল এবার।