মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে একদল ছাত্রী। বিভিন্ন শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে একতালে হাত ও পা সামনে এগিয়ে নিচ্ছে তারা। সামনে থেকে তাদের দেখিয়ে দিচ্ছিলেন একজন প্রশিক্ষক। নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র এটি। এই বিদ্যালয়ের ৫০ জন ছাত্রী এখন আত্মরক্ষায় শিখছে কারাতে।
কেবল সরকারি বালিকা স্কুলের মেয়েরা নয়, রাস্তাঘাটে হয়রানি ও যৌন নিপীড়ন থেকে রেহাই পেতে নোয়াখালীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চালু হয়েছে কারাতে প্রশিক্ষণ। বিনা মূল্যে এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সার্ভিস ফর হিউম্যান বিং অর্গানাইজেশন (এসএইচবিও) নামের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সহযোগিতায় রয়েছে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ।
‘নারীর প্রতি সহিংসতা কমানোর জন্য আওয়াজ তুলুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয় নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। এতে প্রশিক্ষণ নেয় বিদ্যালয়টির ৫০ জন ছাত্রী। এরপর শহরের আহম্মদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
প্রশিক্ষণের লক্ষ্য নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো ও আত্মরক্ষায় সক্ষমতা অর্জন। জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে এই কর্মসূচি চলবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফয়েজুন নেছা বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের মেয়েরা অনেক আত্মবিশ্বাসী হচ্ছে। ঘর থেকে তারা যখন বের হবে, তখন প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয়, সে বিষয়ে জানতে পারছে। হাতে–কলমে কারাতে প্রশিক্ষণ পেয়ে ছাত্রীরাও বেশ উচ্ছ্বসিত।
কারাতে প্রশিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে তিনি লক্ষ করেছেন, অনেক মেয়ের কারাতে শেখার আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু অভিভাবকদের দিক থেকে বাধা আসছে। ছেলেদের খেলা মেয়েরা কেন খেলছে, এ ধরনের কথা বলতে শোনা যায় অনেক অভিভাবককে। অভিভাবকেরা এগিয়ে এলে নিয়মিত কারাতে প্রশিক্ষণে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়বে। মেয়েরা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে, নিজেদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া একাধিক ছাত্রী জানায়, প্রশিক্ষণে সুযোগ পেয়ে তারা খুবই খুশি। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে তাদের প্রায়ই ইভ টিজিংয়ের শিকার হতে হয়। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। রাস্তাঘাটে চলাচলের ক্ষেত্রে নিজেকে রক্ষার জন্য সব মেয়েরই এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি বলে জানায় ছাত্রীরা।